প্রকৃতি ও বিনোদন
প্রকৃতি ও বিনোদন
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের আর্টিকেল-২৯(১)(ঙ) অনুযায়ী, শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে শেখা শিশুর সম্পূর্নরূপে বিকাশের একটি অধিকার। তাই শিশুকে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য প্রকৃতির সাথে শিশুর নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য শিশুর প্রারম্ভিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমে স্থান পেয়েছে প্রকৃতির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।
কল্পনাকরুন, ভাবুন…………গাছ থেকে আপেল পড়া যেমনিউটনকে মহাকর্ষের প্রকৃতি অনুমান করতে বাধ্য করেছে জলবায়ু পরিবর্তন যেমন
বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করেছে
তেমনি প্রকৃতির সংস্পর্শে শিশুকে নিলে
বুঝবে সে আকাশ ও পৃথিবীর নিয়ন্ত্রিত এই সম্পর্ক।
শিশুদের জানতে হবে প্রকৃতির উপাদান কোথা থেকে আসে। কল্পনা করুন এবং ভাবুন, শিশুদেরকে নদী, জলপ্রপাত না দেখালে তারা ভাববে জল কেবল কলস, ট্যাপ অথবা বোতল থেকে আসে। তাই প্রকৃতির কাছ থেকে আমরা যেসব উপাদান পাই সেগুলো নিয়ে প্রতিদিন শিশুর সাথে কথা বলুন। তাদেরকে বোঝাতে হবে প্রকৃতি মুখ ফিরিয়ে নিলে রাষ্ট্রের সংবিধান দ্বারাও মৌলিক উপাদান সরবরাহ নিশ্চিত সম্ভব নয়।
আমরা শিশুর প্রাকৃতিক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রতিটি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে কৃত্রিম প্রাকৃতিক কর্ণার স্হাপন করা হয়েছে। সেখানে শিশুদের গাছপালা, বন্য প্রাণী, পোকা-মাকড় ও ফল-ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
কল্পনা করুন, ভাবুন……………
শিশুকে সবুজ ঘাসে খালি পায়ে হাঁটতে দিলে
মাটিতে গর্ত করে ছোট ছোট প্রাণীর সন্ধান করতে দিলে
প্রতিটি জীবের জীবনচক্র বুঝতে দিলে
পাখির কল-কাকলি শুনতে দিলে
রংধনু উঠতে দেখতে দিলে
শিশু বিজ্ঞানী হিসেবে কথা বলবে
হাজারও গল্প তৈরী করবে
ডিজিটাল পরিবেশ থেকে বেরিয়ে
প্রতিদিন প্রকৃতির সাথে থাকার বিস্ময় বোধ করবে।
একমাত্র প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই শিশুর প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি হবে। তাই প্রতিদিন উত্তেজনাপূর্বক প্রাকৃতিক পদচারনার মাধ্যমে প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া বয়স্কদের উচিত।
পরীক্ষামূলক শিক্ষার সমস্ত উপাদান প্রকৃতিতে রয়েছে। ষড়ঋতুর সমস্ত শেড, রংধনুর সমস্ত রং আর রং বেরঙের ফল ও ফুল দেখে শিশুরা বিভিন্ন রঙের তুলনা করবে এবং রঙতুলিতে ফুটিয়ে তুলবে। শিশুদেরকে জলের ক্রিয়াকলাপের সাথে সম্পৃক্ত করলে ডুবে থাকা, ভেসে থাকা, শুন্য পাত্র, পানি ভর্তি পাত্র, পানির গভিরতা ইত্যাদি জ্ঞানীয় দক্ষতা লাভ করবে। বাগান পরিচর্যায় শিশুকে সম্পৃক্ত করলে দেশজ ফলমুল/শাকসবজি সেবনের প্রতি শিশুর আগ্রহ বাড়বে।
কল্পনা করুন, ভাবুন……………
যে বৃষ্টি ঘাস এবং পাতাকে সবুজে পরিনত করে,
নদী, খাল, বিল, কূপ, পুকুরকে পূরণ করে
সে বৃষ্টি আবার বন্যার কারণ হয়।
যে গাছ অনেক পাখি, প্রাণী এবং মৌমাছিদের বাড়ি
সে গাছ আবার শ্বাস নিতে আমাদের অক্সিজেন দেয়।
অসীম রোদ্রে যে গাছ বিনা পারিশ্রমিকে হাজারো মানুষকে ছায়া দেয়
একজনের তুচ্ছ প্রয়োজনে আনন্দে সে গাছ কেটে ফেলা হয়।
কাজেই শিশুকে প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব বুঝতে দিলে বড় হয়ে হয়তো চিরাচরিত পেশার পরিবর্তে পরিবেশ বাঁচানোর জন্য সবুজ পেশার ক্ষেত্রগুলি যেমন পরিবেশ অর্থনীতীবিদ, বাস্তুতত্ত্ব অর্থনীতীবিদ, জীব বৈচিত্র সংরক্ষণবাদী, নদী গবেষক, বন সংরক্ষক, পরিবেশ পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশ প্রকৌশলী, পরিবেশ বিজ্ঞানী, ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশগত স্হাপত্য, পুনঃব্যবহারযোগ্য পণ্য উৎপাদনকারক বা সরবরাহকারক ব্যবসায়ী, জৈব সার উৎপাদনকারক বা সরবরাহকারক, জৈব শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপাদনকারক বা সরবরাহকারক, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনার বা স্থপতি, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকারক বা সরবরাহকারক ইত্যাদি পেশা বেছে নেবে।